[ By the courtesy of Engr. Noor Hossain , textilebloggers.com & actual Author Engr. Faysal Ahmed ]
ফাইনাল ইয়ার এর মাঝামাঝি অবস্থায় চলে এসেছ । কিছুদিন পরই পড়ালেখার ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে, ভাবতেই ভালো লাগছে, তাই না ? তার উপর ফাইনাল ইয়ার এ ফ্যাক্টরিতে গিয়ে ইন্টার্নি(মিল ট্রেনিং)…কত রোমাঞ্চকর একটা জিনিস । ফ্যাক্টরিতে যাওয়া মানেই সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা, যা কিছু এতদিন বইতে পড়েছ সে সব কিছু এখন চোখের সামনে দেখতে পারবে । যে জিনিস পড়তে পড়তে মাথায় হালকা পাতলা টাক দেখা দিয়েছিল, সেটা যখন চোখের সামনে দেখতে পারবে তখন মনে হবে এত সোজা জিনিসের জন্য মাথার চুল সব ফেলে দিলাম ? কোন দুনিয়ায় ছিলাম আমি !!
যাই হোক, আসল কথায় আসি । অনেকেই ফাইনাল ইয়ার এর শুরুতেই কোন ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নি করবে তা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেয় । আবার তাদেরকেই ইন্টার্নি শুরু হবার কিছুদিন পর ফ্যাক্টরির আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যায় না । এমনটি কারোই কাম্য নয় ।
ইন্টার্নি করার সময় সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হল নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়া এবং সাথে সাথে নতুন নতুন জিনিস শেখা । ইন্টার্নির সময়টা অনেক স্বল্প কিন্তু এই স্বল্প সময়ের ভেতরে অনেক কিছুই শিখতে হয় । তাই ইন্টার্নি শুরু করার আগে আমাদের সবার উচিত নিজেকে ঐ সময়ের জন্য প্রস্তুত করে নেয়া । ইন্টার্নির সময় একটা সুনির্দিষ্ট রুটিনের মধ্যদিয়ে আমাদের চলতে হয় । কিন্তু ঐ রুটিনের মধ্যে থাকাকালীন সময়ে যদি নিজের পরিকল্পনা মাফিক এগুনো যায়, তাহলে ইন্টার্নির এই স্বল্প সময়ে অনেক কিছুই শেখা যায় । কিন্তু এর জন্য চাই পরিপূর্ণ ডেডিকেশন । অন্যের আশায় বসে থাকলে কখনোই কোন কাজ ভালো করা সম্ভব না । অন্যের দ্বারা হয়তো কাজ টা শেষ হবে কিন্তু ঐ কাজ থেকে তোমার কিছুই শেখা হবেনা ।
কোথায় ইন্টার্নি করবো ?
এই প্রশ্নটা ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্টদের কাছে খুবই কমন একটা প্রশ্ন । সব স্টুডেন্ট ই কিছু কমন ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নি করতে চায় । এব্যাপারটা একসময় কথা কাটাকাটির পর্যায়ে চলে যায় । এজন্য আমাদের উচিত বিভিন্ন ফ্যাক্টরি সম্বন্ধে ধারনা রাখা । এ কাজটা করা যায় আগের বছরের বিভিন্ন বড় ভাইদের সাথে যোগাযোগ করে – কে কোথায় ইন্টার্নি করেছে, সেখানকার সুযোগ সুবিধা কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি…। মনে রাখতে হবে, আমাদের সেই ফ্যাক্টরিই সিলেক্ট করা উচিত যেখানে প্রসেস ভেরিয়েশন বেশি অর্থাৎ কাজের সুযোগ সুবিধা বেশি । যেমন – Dyeing হলে Knit Dyeing এর সাথে Yarn অথবা Woven Dyeing থাকলে ভালো হয় । সাথে Singeing , Mercerising, Sueding, Raising machine ইত্যাদি থাকলে আরও ভালো হয় । এসব ইনফরমেশন গুলো যানতে পার সিনিয়র বড় ভাইদের মাধ্যমে যারা ওসব ফ্যাক্টরিতে কর্মরত আছেন বা ছিলেন ।
ইন্টার্নির পূর্বপ্রস্তুতি…
ইন্টার্নি শুরু করার আগে পূর্বপ্রস্তুতি টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।প্রথমেই নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে । যে কাজটা অবশ্যই করতে হবে তা হল, আগের বছরের ভালো কোন একটা ইন্টার্নি রিপোর্ট জোগাড় করা । সেটা Hard Copy বা Soft Copy যেকোনোটাই হতে পারে । রিপোর্টটা হাতে পাওয়ার সাথে পুরোটা একনজর চোখ বুলিয়ে নিতে হবে । এতে পুরো রিপোর্ট সম্বন্ধে একটা ধারনা চলে আসে যা পরবর্তীতে অনেক কাজে দেয় । আর যখন ইন্টার্নির জন্য ফ্যাক্টরি ঠিক হয়ে যায়, তখন ওই ফ্যাক্টরির আগের বছরের রিপোর্টটা জোগাড় করা অবশ্য কর্তব্য । এখানে মনে রাখতে হবে, রিপোর্টটা শুধু মাত্র ফ্যাক্টরির বিভিন্ন জিনিস সম্বন্ধে ধারনা নেয়ার জন্য, কোনভাবেই কপি পেস্ট করার জন্য নয় । আর এক বছরে একটা ফ্যাক্টরির অনেক কিছুই পরিবর্তন হতে পারে, সেক্ষেত্রে না বুঝে কপি পেস্ট করলে ভুল হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে । টেক্সটাইল এর চার পাঁচ বছরে আমরা যে জিনিস টা নিয়ে বের হয়ে যাই, সেটা হচ্ছে একটা ভালো ইন্টার্নি ও প্রজেক্ট রিপোর্ট । সুতরাং যে জিনিসটার জন্য তুমি সারা জীবন গর্ব করতে পারবে সে জিনিসটা কে কপি পেস্ট করে নষ্ট করাটা কি ঠিক হবে ? এখন চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রজেক্ট রিপোর্ট নিয়েই বেশি জিজ্ঞেস করে সুতরাং একটা ভালো প্রজেক্ট ও ইন্টার্নি রিপোর্ট তৈরি মানে নিজেকে একধাপ এগিয়ে নেয়া ।
ইন্টার্নির ক্ষেত্রে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল ভালো পার্টনার । ইন্টার্নির দিনগুলো আসলেই অনেক কষ্টের । এর একটা প্রধান কারণ হল সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশ । সুতরাং এখানে নিজেকে যেমন পরিশ্রমী হতে হয় তেমনি পার্টনারদেরকেও পরিশ্রমী হতে হয় । আর একটা ভালো রিপোর্ট তৈরি করা একজনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার । সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সফলভাবে ইন্টার্নি শেষ করা যায় ।
ইন্টার্নির সময় অনেক অনেক Data কালেক্ট করতে হয় । আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টার্নির সময় লেখার জন্য যে খাতাটি দেয়া হয় তা একেবারেই ছোট । এজন্য আমাদেরকে একটা বড় দেখে শক্ত মলাটের খাতা কেনা উচিত যাতে পুরো ইন্টার্নির সময় এক খাতাতেই সব কিছু লেখা যায় ।
ইন্টার্নির সময়ে করনীয়…
যেকোনো ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নি করার প্রথম দিন ই একটা রুটিন দিয়ে দেয়া হয় কোন দিন কোন কোন সেকশনে যেতে হবে সেটার । সুতরাং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঐ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই যাতে ওই সেকশনের সকল ডাটা কালেক্ট করা যায় । এজন্য আগের দিন রাতেই প্ল্যান করে রাখতে হবে কোন দিন কোন কোন টপিক নিয়ে কাজ করা হবে এবং সেই টপিকের উপর আগের বছরের রিপোর্ট এ কি আছে, সেই রিপোর্ট এর ডাটার কি কি পরিবর্তন হয়েছে এবং নতুন কি কি সংযোজন হয়েছে তা নিয়ে । এ পদ্ধতিটা প্রথম কয়েকদিন এলোমেলো লাগলেও একসময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ।
সবসময়ই চেষ্টা করা উচিত যেকোনো রিপোর্ট এ আগের বছরের চাইতে নতুন নতুন ডাটা সংযোজন করা এবং খাতার প্রেজেন্টেশন টা অনেক বেশি সমৃদ্ধ করা । এজন্য লেখার পাশাপাশি সম্পূরক ছবি দিলে দেখতে এবং বুঝতে অনেক সুবিধা হয় । একটা উন্নতমানের রিপোর্ট তৈরি করার জন্য চাই অনেক অনেক বেশি actual Data . তাই ইন্টার্নির প্রথম দিন থেকেই উচিত যত বেশি সম্ভব ডাটা কালেক্ট করা । এক্ষেত্রে অনেকের ই অভিযোগ থাকে যে ইন্টার্নি করার সময় ফ্যাক্টরির ইঞ্জিনিয়ার দের সাহায্য পাওয়া যায় না । কথাটা দুঃখজনক হলেও সত্য । এর কারণ ও রয়েছে । ফ্যাক্টরিতে ইঞ্জিনিয়ার রা এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে অন্য কিছুর জন্য সময় বের করা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় । এজন্য সবসময় তাদের পেছনে পেছনে লেগে থাকতে হবে । অনেক অনেক বেশি প্রশ্ন করতে হবে যদিও তারা অনেক বিরক্ত হবে । কিন্তু একসময় যখন বুঝতে পারবে তোমার জানার আগ্রহ আছে তখন নিজে থেকেই একদিন সময় দিবে । সারকথা হল এই যে সবকিছু ম্যানেজ করে নিতে হবে । তবে মনে রাখবে যে, শুধুমাত্র ইন্টার্নির সময়টাতেই তুমি যাকে ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে, যত ইচ্ছে প্রশ্ন করতে পার । জীবনের অন্য কোন পর্যায়ে এত স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করার অধিকার নাও পেতে পার । সুতরাং এই সুযোগ হেলায় হারিয়ো না ।
কেউ তোমাকে নিজে থেকে এসে কিছু শিখিয়ে দিয়ে যাবে না । তোমার শেখা নিজে থেকেই শিখতে হবে ।
তোমার কাজ হল এই শেখার জন্য যা যা করার প্রয়োজন, তার সবই করা ।
নতুন নতুন কি ধরনের ডাটা সংযোজন করা যায় তা একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায় । যেমন, Dyeing এর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ রিপোর্ট এ দেখা যায় Process এর বর্ণনা কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায় Dyeing machine গুলো সম্পর্কে details এবং Technical বর্ণনা । যদি এখানে এসব তথ্য অনেক বেশি Technical way তে প্রেজেন্ট করা যায় তাহলে নিঃসন্দেহে রিপোর্টটা অন্যান্য রিপোর্ট থেকে ভালো হবে ।
রিপোর্ট লেখা…
একটি ভালো রিপোর্ট লেখার মধ্য দিয়েই একটি ইন্টার্নির সফলতা নির্ভর করে । রিপোর্ট লেখার বিষয়টি শুরু থেকেই মাথায় রাখা উচিত । চেষ্টা রাখতে হবে রিপোর্ট টা যেন আগের বছরের যেকোনো রিপোর্ট এর চাইতে অনেক বেশি তথ্য সমৃদ্ধ এবং ওয়েল ডেকোরেটেড হয় । এজন্য যত বেশি তথ্য সংগ্রহে রাখা যায় ততই ভালো । ইন্টার্নির দুই মাসের প্রথম মাস শুধু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে । কিন্তু ২য় মাস থেকেই আস্তে আস্তে রিপোর্ট লেখা শুরু করতে হবে । এটা খসড়া হিসেবে রাখতে হবে । ফাইনাল রিপোর্ট লেখার সময় এই খসড়া থেকেই যোজন বিয়োজন করে চূড়ান্ত রিপোর্ট লেখতে হবে ।
পুরো রিপোর্ট লেখা কখনোই একার পক্ষে সম্ভব না । তাই গ্রুপের সবাইকে যার যার আগ্রহ অনুসারে বিভিন্ন সেকশন লেখার দায়িত্ব নিয়ে নিতে হবে । এজন্য প্রয়োজন সবার সংগৃহীত তথ্যগুলো একসাথে করা । একটা বিষয় সম্বন্ধে লেখার সময় সবার সাথে তথ্য শেয়ার করা উচিত । এতে বিভিন্ন অজানা জিনিস বের হয়ে আসে ।
রিপোর্ট এ একটা ফ্যাক্টরির অনেক গুলো সেকশন নিয়ে লিখতে হয় । কিছু গৎবাঁধা জিনিস সব রিপোর্টেই থাকে । এ জিনিস গুলো কপি পেস্ট করা যায় । তবে এক্ষেত্রে প্রেজেন্টেশন টা অন্যদের চাইতে ভিন্ন করা যায় যা একেবারেই নিজেদের উপর নির্ভর করে । এ অংশটুকু ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রেই চেষ্টা করতে হবে লেখাটা নিজেদের মত করে গুছিয়ে লিখা ।
রিপোর্ট লিখার সময় একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতে হবে । রুটিন টা এমন হবে যে, একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সেকশন লিখে শেষ করতে হবে । যদি লিখব লিখব করে রেখে দেয়া হয় তাহলে আর কখনোই রিপোর্ট লেখা শেষ হবে না । তখন শেষ মুহূর্তে এসে পড়িমরি করে সবকিছু শেষ করতে হবে ।
সারকথা…
অনেক কথা বললাম । জানিনা এতে তোমাদের কতটুকু উপকার হবে । যদি এর মাধ্যমে ইন্টার্নি সম্বন্ধে তোমাদের সামান্যতম ধারনা হয়, তাহলেই এই লেখাটা সার্থক । আর একটা কথা বলতে চাই । কথাটা হল প্রজেক্ট এর ব্যাপারে । প্রজেক্ট হল কোন জিনিস কে বারবার বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নতুন কিছু বের করে নিয়ে আসা । সমস্যা হল, পরীক্ষা নিরীক্ষা আর নতুন কিছু বের করে আসার কথা শুনলেই মাথা গরম হয়ে যায় । মনে হয় এ জিনিস আবার কেমনে করে !! আসলে ব্যাপারটা তেমন কঠিন না । প্রজেক্ট করার সময় আমরা আমাদের জানা কাজ গুলো নতুন জিনিসের উপর করে একটা রেজাল্ট বের করে নিয়ে আসি । আর আমরা যে যে কাজ গুলো করি তা একটা সিস্টেমেটিক উপায়ে খাতায় লিখি । এখন কথা হল, ইন্টার্নি করার সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ফ্যাক্টরিতে যে যে প্রসেস গুলো চলছে তা কে কিভাবে একটু মডিফাই করা যায় , মডিফাই করলে রেজাল্ট টা কি আসতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি । আমার একথা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । তুমি ফ্যাক্টরিতে যাও, প্রসেস গুলো দেখ, নিজে নিজে একটু চিন্তা কর, দেখবে মাথায় এত চিন্তা আসবে যে কোনটা ছেড়ে কোনটা করবা সে ডিসিশন নিতেই কষ্ট হয়ে যাবে ।
আমি এতক্ষণ যে কথাগুলো বললাম, সেগুলো একান্তই নিজের চিন্তা ভাবনা । এর অনেকগুলো কাজ আমি করতে পেরেছি, আবার কিছু কিছু কাজ করতে পারি নাই । আসলে প্লানটা তোমার নিজেকেই সাজাতে হবে । তুমি এ লেখা থেকে জাস্ট ধারনা টা নিতে পার । নিজে প্লান করে সে প্লান সফল করার মধ্যেই মজা ।
আমার কথাগুলো কি বেশি কঠিন লাগলো ? ইন্টার্নির কাজ গুলো কঠিন মনে হচ্ছে ? তাহলে একটু দেখিয়ে দাও না, যা কিছু কঠিন, তুমি নিজে অন্যসব কিছুর চাইতে একটু বেশি কঠিন…
[ By the courtesy of Engr. Noor Hossain , textilebloggers.com & actual Author Engr. Faysal Ahmed ]
ফাইনাল ইয়ার এর মাঝামাঝি অবস্থায় চলে এসেছ । কিছুদিন পরই পড়ালেখার ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে, ভাবতেই ভালো লাগছে, তাই না ? তার উপর ফাইনাল ইয়ার এ ফ্যাক্টরিতে গিয়ে ইন্টার্নি(মিল ট্রেনিং)…কত রোমাঞ্চকর একটা জিনিস । ফ্যাক্টরিতে যাওয়া মানেই সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা, যা কিছু এতদিন বইতে পড়েছ সে সব কিছু এখন চোখের সামনে দেখতে পারবে । যে জিনিস পড়তে পড়তে মাথায় হালকা পাতলা টাক দেখা দিয়েছিল, সেটা যখন চোখের সামনে দেখতে পারবে তখন মনে হবে এত সোজা জিনিসের জন্য মাথার চুল সব ফেলে দিলাম ? কোন দুনিয়ায় ছিলাম আমি !!
যাই হোক, আসল কথায় আসি । অনেকেই ফাইনাল ইয়ার এর শুরুতেই কোন ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নি করবে তা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেয় । আবার তাদেরকেই ইন্টার্নি শুরু হবার কিছুদিন পর ফ্যাক্টরির আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যায় না । এমনটি কারোই কাম্য নয় ।
ইন্টার্নি করার সময় সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হল নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়া এবং সাথে সাথে নতুন নতুন জিনিস শেখা । ইন্টার্নির সময়টা অনেক স্বল্প কিন্তু এই স্বল্প সময়ের ভেতরে অনেক কিছুই শিখতে হয় । তাই ইন্টার্নি শুরু করার আগে আমাদের সবার উচিত নিজেকে ঐ সময়ের জন্য প্রস্তুত করে নেয়া । ইন্টার্নির সময় একটা সুনির্দিষ্ট রুটিনের মধ্যদিয়ে আমাদের চলতে হয় । কিন্তু ঐ রুটিনের মধ্যে থাকাকালীন সময়ে যদি নিজের পরিকল্পনা মাফিক এগুনো যায়, তাহলে ইন্টার্নির এই স্বল্প সময়ে অনেক কিছুই শেখা যায় । কিন্তু এর জন্য চাই পরিপূর্ণ ডেডিকেশন । অন্যের আশায় বসে থাকলে কখনোই কোন কাজ ভালো করা সম্ভব না । অন্যের দ্বারা হয়তো কাজ টা শেষ হবে কিন্তু ঐ কাজ থেকে তোমার কিছুই শেখা হবেনা ।
কোথায় ইন্টার্নি করবো ?
এই প্রশ্নটা ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্টদের কাছে খুবই কমন একটা প্রশ্ন । সব স্টুডেন্ট ই কিছু কমন ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নি করতে চায় । এব্যাপারটা একসময় কথা কাটাকাটির পর্যায়ে চলে যায় । এজন্য আমাদের উচিত বিভিন্ন ফ্যাক্টরি সম্বন্ধে ধারনা রাখা । এ কাজটা করা যায় আগের বছরের বিভিন্ন বড় ভাইদের সাথে যোগাযোগ করে – কে কোথায় ইন্টার্নি করেছে, সেখানকার সুযোগ সুবিধা কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি…। মনে রাখতে হবে, আমাদের সেই ফ্যাক্টরিই সিলেক্ট করা উচিত যেখানে প্রসেস ভেরিয়েশন বেশি অর্থাৎ কাজের সুযোগ সুবিধা বেশি । যেমন – Dyeing হলে Knit Dyeing এর সাথে Yarn অথবা Woven Dyeing থাকলে ভালো হয় । সাথে Singeing , Mercerising, Sueding, Raising machine ইত্যাদি থাকলে আরও ভালো হয় । এসব ইনফরমেশন গুলো যানতে পার সিনিয়র বড় ভাইদের মাধ্যমে যারা ওসব ফ্যাক্টরিতে কর্মরত আছেন বা ছিলেন ।
ইন্টার্নির পূর্বপ্রস্তুতি…
ইন্টার্নি শুরু করার আগে পূর্বপ্রস্তুতি টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।প্রথমেই নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে । যে কাজটা অবশ্যই করতে হবে তা হল, আগের বছরের ভালো কোন একটা ইন্টার্নি রিপোর্ট জোগাড় করা । সেটা Hard Copy বা Soft Copy যেকোনোটাই হতে পারে । রিপোর্টটা হাতে পাওয়ার সাথে পুরোটা একনজর চোখ বুলিয়ে নিতে হবে । এতে পুরো রিপোর্ট সম্বন্ধে একটা ধারনা চলে আসে যা পরবর্তীতে অনেক কাজে দেয় । আর যখন ইন্টার্নির জন্য ফ্যাক্টরি ঠিক হয়ে যায়, তখন ওই ফ্যাক্টরির আগের বছরের রিপোর্টটা জোগাড় করা অবশ্য কর্তব্য । এখানে মনে রাখতে হবে, রিপোর্টটা শুধু মাত্র ফ্যাক্টরির বিভিন্ন জিনিস সম্বন্ধে ধারনা নেয়ার জন্য, কোনভাবেই কপি পেস্ট করার জন্য নয় । আর এক বছরে একটা ফ্যাক্টরির অনেক কিছুই পরিবর্তন হতে পারে, সেক্ষেত্রে না বুঝে কপি পেস্ট করলে ভুল হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে । টেক্সটাইল এর চার পাঁচ বছরে আমরা যে জিনিস টা নিয়ে বের হয়ে যাই, সেটা হচ্ছে একটা ভালো ইন্টার্নি ও প্রজেক্ট রিপোর্ট । সুতরাং যে জিনিসটার জন্য তুমি সারা জীবন গর্ব করতে পারবে সে জিনিসটা কে কপি পেস্ট করে নষ্ট করাটা কি ঠিক হবে ? এখন চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রজেক্ট রিপোর্ট নিয়েই বেশি জিজ্ঞেস করে সুতরাং একটা ভালো প্রজেক্ট ও ইন্টার্নি রিপোর্ট তৈরি মানে নিজেকে একধাপ এগিয়ে নেয়া ।
ইন্টার্নির ক্ষেত্রে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল ভালো পার্টনার । ইন্টার্নির দিনগুলো আসলেই অনেক কষ্টের । এর একটা প্রধান কারণ হল সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশ । সুতরাং এখানে নিজেকে যেমন পরিশ্রমী হতে হয় তেমনি পার্টনারদেরকেও পরিশ্রমী হতে হয় । আর একটা ভালো রিপোর্ট তৈরি করা একজনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার । সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সফলভাবে ইন্টার্নি শেষ করা যায় ।
ইন্টার্নির সময় অনেক অনেক Data কালেক্ট করতে হয় । আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ইন্টার্নির সময় লেখার জন্য যে খাতাটি দেয়া হয় তা একেবারেই ছোট । এজন্য আমাদেরকে একটা বড় দেখে শক্ত মলাটের খাতা কেনা উচিত যাতে পুরো ইন্টার্নির সময় এক খাতাতেই সব কিছু লেখা যায় ।
ইন্টার্নির সময়ে করনীয়…
যেকোনো ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নি করার প্রথম দিন ই একটা রুটিন দিয়ে দেয়া হয় কোন দিন কোন কোন সেকশনে যেতে হবে সেটার । সুতরাং লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঐ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই যাতে ওই সেকশনের সকল ডাটা কালেক্ট করা যায় । এজন্য আগের দিন রাতেই প্ল্যান করে রাখতে হবে কোন দিন কোন কোন টপিক নিয়ে কাজ করা হবে এবং সেই টপিকের উপর আগের বছরের রিপোর্ট এ কি আছে, সেই রিপোর্ট এর ডাটার কি কি পরিবর্তন হয়েছে এবং নতুন কি কি সংযোজন হয়েছে তা নিয়ে । এ পদ্ধতিটা প্রথম কয়েকদিন এলোমেলো লাগলেও একসময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ।
সবসময়ই চেষ্টা করা উচিত যেকোনো রিপোর্ট এ আগের বছরের চাইতে নতুন নতুন ডাটা সংযোজন করা এবং খাতার প্রেজেন্টেশন টা অনেক বেশি সমৃদ্ধ করা । এজন্য লেখার পাশাপাশি সম্পূরক ছবি দিলে দেখতে এবং বুঝতে অনেক সুবিধা হয় । একটা উন্নতমানের রিপোর্ট তৈরি করার জন্য চাই অনেক অনেক বেশি actual Data . তাই ইন্টার্নির প্রথম দিন থেকেই উচিত যত বেশি সম্ভব ডাটা কালেক্ট করা । এক্ষেত্রে অনেকের ই অভিযোগ থাকে যে ইন্টার্নি করার সময় ফ্যাক্টরির ইঞ্জিনিয়ার দের সাহায্য পাওয়া যায় না । কথাটা দুঃখজনক হলেও সত্য । এর কারণ ও রয়েছে । ফ্যাক্টরিতে ইঞ্জিনিয়ার রা এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে অন্য কিছুর জন্য সময় বের করা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় । এজন্য সবসময় তাদের পেছনে পেছনে লেগে থাকতে হবে । অনেক অনেক বেশি প্রশ্ন করতে হবে যদিও তারা অনেক বিরক্ত হবে । কিন্তু একসময় যখন বুঝতে পারবে তোমার জানার আগ্রহ আছে তখন নিজে থেকেই একদিন সময় দিবে । সারকথা হল এই যে সবকিছু ম্যানেজ করে নিতে হবে । তবে মনে রাখবে যে, শুধুমাত্র ইন্টার্নির সময়টাতেই তুমি যাকে ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে, যত ইচ্ছে প্রশ্ন করতে পার । জীবনের অন্য কোন পর্যায়ে এত স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করার অধিকার নাও পেতে পার । সুতরাং এই সুযোগ হেলায় হারিয়ো না ।
কেউ তোমাকে নিজে থেকে এসে কিছু শিখিয়ে দিয়ে যাবে না । তোমার শেখা নিজে থেকেই শিখতে হবে ।
তোমার কাজ হল এই শেখার জন্য যা যা করার প্রয়োজন, তার সবই করা ।
নতুন নতুন কি ধরনের ডাটা সংযোজন করা যায় তা একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায় । যেমন, Dyeing এর ক্ষেত্রে বেশির ভাগ রিপোর্ট এ দেখা যায় Process এর বর্ণনা কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায় Dyeing machine গুলো সম্পর্কে details এবং Technical বর্ণনা । যদি এখানে এসব তথ্য অনেক বেশি Technical way তে প্রেজেন্ট করা যায় তাহলে নিঃসন্দেহে রিপোর্টটা অন্যান্য রিপোর্ট থেকে ভালো হবে ।
রিপোর্ট লেখা…
একটি ভালো রিপোর্ট লেখার মধ্য দিয়েই একটি ইন্টার্নির সফলতা নির্ভর করে । রিপোর্ট লেখার বিষয়টি শুরু থেকেই মাথায় রাখা উচিত । চেষ্টা রাখতে হবে রিপোর্ট টা যেন আগের বছরের যেকোনো রিপোর্ট এর চাইতে অনেক বেশি তথ্য সমৃদ্ধ এবং ওয়েল ডেকোরেটেড হয় । এজন্য যত বেশি তথ্য সংগ্রহে রাখা যায় ততই ভালো । ইন্টার্নির দুই মাসের প্রথম মাস শুধু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে । কিন্তু ২য় মাস থেকেই আস্তে আস্তে রিপোর্ট লেখা শুরু করতে হবে । এটা খসড়া হিসেবে রাখতে হবে । ফাইনাল রিপোর্ট লেখার সময় এই খসড়া থেকেই যোজন বিয়োজন করে চূড়ান্ত রিপোর্ট লেখতে হবে ।
পুরো রিপোর্ট লেখা কখনোই একার পক্ষে সম্ভব না । তাই গ্রুপের সবাইকে যার যার আগ্রহ অনুসারে বিভিন্ন সেকশন লেখার দায়িত্ব নিয়ে নিতে হবে । এজন্য প্রয়োজন সবার সংগৃহীত তথ্যগুলো একসাথে করা । একটা বিষয় সম্বন্ধে লেখার সময় সবার সাথে তথ্য শেয়ার করা উচিত । এতে বিভিন্ন অজানা জিনিস বের হয়ে আসে ।
রিপোর্ট এ একটা ফ্যাক্টরির অনেক গুলো সেকশন নিয়ে লিখতে হয় । কিছু গৎবাঁধা জিনিস সব রিপোর্টেই থাকে । এ জিনিস গুলো কপি পেস্ট করা যায় । তবে এক্ষেত্রে প্রেজেন্টেশন টা অন্যদের চাইতে ভিন্ন করা যায় যা একেবারেই নিজেদের উপর নির্ভর করে । এ অংশটুকু ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রেই চেষ্টা করতে হবে লেখাটা নিজেদের মত করে গুছিয়ে লিখা ।
রিপোর্ট লিখার সময় একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতে হবে । রুটিন টা এমন হবে যে, একটা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সেকশন লিখে শেষ করতে হবে । যদি লিখব লিখব করে রেখে দেয়া হয় তাহলে আর কখনোই রিপোর্ট লেখা শেষ হবে না । তখন শেষ মুহূর্তে এসে পড়িমরি করে সবকিছু শেষ করতে হবে ।
সারকথা…
অনেক কথা বললাম । জানিনা এতে তোমাদের কতটুকু উপকার হবে । যদি এর মাধ্যমে ইন্টার্নি সম্বন্ধে তোমাদের সামান্যতম ধারনা হয়, তাহলেই এই লেখাটা সার্থক । আর একটা কথা বলতে চাই । কথাটা হল প্রজেক্ট এর ব্যাপারে । প্রজেক্ট হল কোন জিনিস কে বারবার বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নতুন কিছু বের করে নিয়ে আসা । সমস্যা হল, পরীক্ষা নিরীক্ষা আর নতুন কিছু বের করে আসার কথা শুনলেই মাথা গরম হয়ে যায় । মনে হয় এ জিনিস আবার কেমনে করে !! আসলে ব্যাপারটা তেমন কঠিন না । প্রজেক্ট করার সময় আমরা আমাদের জানা কাজ গুলো নতুন জিনিসের উপর করে একটা রেজাল্ট বের করে নিয়ে আসি । আর আমরা যে যে কাজ গুলো করি তা একটা সিস্টেমেটিক উপায়ে খাতায় লিখি । এখন কথা হল, ইন্টার্নি করার সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ফ্যাক্টরিতে যে যে প্রসেস গুলো চলছে তা কে কিভাবে একটু মডিফাই করা যায় , মডিফাই করলে রেজাল্ট টা কি আসতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি । আমার একথা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । তুমি ফ্যাক্টরিতে যাও, প্রসেস গুলো দেখ, নিজে নিজে একটু চিন্তা কর, দেখবে মাথায় এত চিন্তা আসবে যে কোনটা ছেড়ে কোনটা করবা সে ডিসিশন নিতেই কষ্ট হয়ে যাবে ।
আমি এতক্ষণ যে কথাগুলো বললাম, সেগুলো একান্তই নিজের চিন্তা ভাবনা । এর অনেকগুলো কাজ আমি করতে পেরেছি, আবার কিছু কিছু কাজ করতে পারি নাই । আসলে প্লানটা তোমার নিজেকেই সাজাতে হবে । তুমি এ লেখা থেকে জাস্ট ধারনা টা নিতে পার । নিজে প্লান করে সে প্লান সফল করার মধ্যেই মজা ।
আমার কথাগুলো কি বেশি কঠিন লাগলো ? ইন্টার্নির কাজ গুলো কঠিন মনে হচ্ছে ? তাহলে একটু দেখিয়ে দাও না, যা কিছু কঠিন, তুমি নিজে অন্যসব কিছুর চাইতে একটু বেশি কঠিন…
[ By the courtesy of Engr. Noor Hossain , textilebloggers.com & actual Author Engr. Faysal Ahmed ]
No comments:
Post a Comment