ফাইনাল ইয়ারের ইন্টার্নি: প্রস্তুতি ও সফলতার কৌশল
তুমি এখন ফাইনাল ইয়ারের মাঝামাঝি। কয়েকদিন পরেই পড়াশোনার চাপ কমে যাবে, ভাবতেই ভালো লাগছে, তাই না? তাছাড়া ফাইনাল ইয়ারে ফ্যাক্টরিতে গিয়ে ইন্টার্নি (মিল ট্রেনিং) করা—এটা এক ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ফ্যাক্টরিতে যাওয়া মানে এক নতুন দুনিয়ায় পা রাখা, যেখানে তুমি এতদিন পড়ালেখা করে যে সব কিছু শুনেছো, এখন সেটি চোখের সামনে দেখতে পারবে। যেগুলো পড়তে পড়তে হালকা চিন্তা ছিল, যখন সেগুলো বাস্তবে দেখতে পারবে, তখন মনে হবে, "এত সোজা জিনিসের জন্য আমি মাথার চুল ফেলেছিলাম! কোন দুনিয়ায় ছিলাম আমি!"
তবে আসল কথা হলো, অনেকেই ফাইনাল ইয়ারের শুরুতেই কোন ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নি করবে তা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেয়। কিন্তু পরে অনেক সময় দেখা যায়, ইন্টার্নি শুরু হওয়ার কিছুদিন পরেই তারা ফ্যাক্টরির আশেপাশে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এটা অবশ্যই কাম্য নয়।
ইন্টার্নি করার চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতি:
ইন্টার্নি করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়া এবং নতুন নতুন জিনিস শেখা। ইন্টার্নির সময়টা স্বল্প, কিন্তু এ সময়ে অনেক কিছু শিখতে হয়। তাই ইন্টার্নি শুরু করার আগে নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত করতে হবে। ইন্টার্নি চলাকালীন সময়ে একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতে হয়। কিন্তু যদি নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা যায়, তাহলে এই স্বল্প সময়ে অনেক কিছু শেখা সম্ভব। এর জন্য দরকার পরিপূর্ণ ডেডিকেশন। অন্যের উপর ভরসা করলে কখনোই কাজ ভালো করা সম্ভব নয়।
কোথায় ইন্টার্নি করবো?
এটি ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টদের মধ্যে একটি প্রচলিত প্রশ্ন। অধিকাংশ স্টুডেন্টই পরিচিত কিছু ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নি করতে চায়। এজন্য আমাদের উচিত বিভিন্ন ফ্যাক্টরি সম্পর্কে ধারণা রাখা। আগের বছরের সিনিয়রদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারা যায় কে কোথায় ইন্টার্নি করেছে এবং সেখানকার সুযোগ সুবিধা কেমন। ফ্যাক্টরি সিলেকশন করতে হবে এমন জায়গা যেখানে প্রসেস ভেরিয়েশন বেশি, অর্থাৎ কাজের সুযোগ সুবিধা বেশি। যেমন—Dyeing হলে Knit Dyeing এর সাথে Yarn বা Woven Dyeing থাকলে ভালো। এছাড়া Singeing, Mercerising, Sueding, Raising machine ইত্যাদি থাকলে আরও ভালো হয়।
ইন্টার্নির পূর্বপ্রস্তুতি:
ইন্টার্নি শুরু করার আগে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রথমে একটি ভালো ইন্টার্নি রিপোর্ট সংগ্রহ করা জরুরি। তা হতে পারে Hard Copy বা Soft Copy। রিপোর্টটি একনজর দেখে নিতে হবে, এতে পুরো রিপোর্ট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে যা পরবর্তীতে কাজে আসবে। যখন ফ্যাক্টরির নাম ঠিক হয়ে যাবে, তখন ওই ফ্যাক্টরির আগের বছরের রিপোর্ট সংগ্রহ করা উচিত। মনে রাখতে হবে, রিপোর্টটি কেবল ধারনা নেওয়ার জন্য, কপি-পেস্ট করার জন্য নয়। টেক্সটাইলের প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্টার্নির জন্য ভালো পার্টনার:
একটি ভালো পার্টনার খুবই প্রয়োজনীয়। ইন্টার্নির দিনগুলো অনেক কষ্টের হতে পারে, কারণ এটা একটি নতুন পরিবেশ। সুতরাং, পরিশ্রমী হতে হবে এবং একইভাবে ভালো পার্টনারও চাই। একটা ভালো রিপোর্ট তৈরি করা একার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ইন্টার্নি সফলভাবে শেষ করা সম্ভব।
ইন্টার্নির সময়ে ডাটা কালেকশন:
ইন্টার্নি করার সময় অনেক ডাটা কালেক্ট করতে হয়। ইন্টার্নির জন্য যে খাতা দেয়া হয় তা অনেক ছোট, তাই একটি বড় খাতা কিনে নিতে হবে যাতে সমস্ত ডাটা এক জায়গায় লিখে রাখা যায়।
ইন্টার্নি সময়ে করণীয়:
যেকোনো ফ্যাক্টরিতে ইন্টার্নি শুরু করার প্রথম দিন একটি রুটিন দেয়া হয়। এর মধ্যে লক্ষ্য রাখতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেকশনের সমস্ত ডাটা সংগ্রহ করা যায়। আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখতে হবে কোন দিন কোন টপিক নিয়ে কাজ করা হবে এবং সেই টপিকের ওপর আগের বছরের রিপোর্টে কি ছিল, তার পরিবর্তন এবং নতুন কি সংযোজন হয়েছে তা নিয়ে কাজ করা। প্রথম কয়েকদিন এলোমেলো লাগলেও একসময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল রিপোর্টে নতুন ডাটা যোগ করা এবং তা যথাযথভাবে উপস্থাপন করা।
রিপোর্ট লেখা:
একটি ভালো রিপোর্ট লেখার মধ্য দিয়েই ইন্টার্নির সফলতা নির্ভর করে। রিপোর্ট লেখার কাজ শুরু থেকেই মাথায় রাখতে হবে। ইন্টার্নির প্রথম মাসে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, এবং দ্বিতীয় মাস থেকেই রিপোর্ট লেখা শুরু করতে হবে। রিপোর্টে ফ্যাক্টরির বিভিন্ন সেকশনের উপর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে সবার মধ্যে তথ্য শেয়ার করা উচিত যাতে কোনো অজানা বিষয় বের হয়ে আসে।
সারকথা:
অনেক কথা বললাম, জানি না এতে তোমাদের কতটুকু উপকার হবে। যদি এর মাধ্যমে ইন্টার্নি সম্পর্কে সামান্য ধারণাও হয়, তবে লেখাটি সার্থক হবে। ইন্টার্নির কাজগুলো কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু নিজেকে প্রস্তুত করে সফলভাবে এগিয়ে যাওয়াই আসল। তোমার কাজ হলো শেখার জন্য যা যা প্রয়োজন, তা করাই।
মনে রেখো, ইন্টার্নি এক ধরনের সুযোগ যেখানে তুমি প্রশ্ন করতে পারো, জানতে পারো। এই সুযোগটি হারিয়ো না, কারণ জীবনে আর কখনো এমন স্বাধীনতা পাওয়া যাবে না।
No comments:
Post a Comment