Textile Floor │ Moslin saree or moslin kapor (হারিয়ে যাওয়া মসলিন)

Textile Floor │ Moslin saree or moslin kapor (হারিয়ে যাওয়া মসলিন), Moslin fabric, Moslin cloth, Moslin history, Muslin saree,  মসলিন শাড়ি, মসলিন কাপর  মসলিন তুলার আঁশ থেকে প্রস্তুত করা এক প্রকারের অতি সুক্ষ্ণ কাপড়।
বাংলা মসলিন শব্দটি আরবি, ফারসি কিংবা সংস্কৃতমূল শব্দ নয়। এস. সি. বার্নেল ও হেনরি ইউল নামের দজন ইংরেজ প্রকাশিত অভিধান "হবসন জবসন"-এ উল্লেখ করা হয়েছে মসলিন শব্দটি এসেছে 'মসূল' থেকে। ইরাকের এক বিখ্যাত ব্যবসাকেন্দ্র হলো মসূল। এই মসূলেও অতি সূক্ষ্ম কাপড় প্রস্তুত হতো। এই 'মসূল' এবং 'সূক্ষ্ম কাপড়' -এ দুয়ের যোগসূত্র মিলিয়ে ইংরেজরা অতিসূক্ষ্ম কাপড়ের নাম দেয় 'মসলিন'।অবশ্য বাংলার ইতিহাসে 'মসলিন' বলতে বোঝানো হয় তকালীন ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তি অঞ্চলে উপাদিত অতি সূক্ষ্ম একপ্রকার কাপড়কে।

বিবরণ
মসলিন প্রস্তুত করা হতো পূর্ব বাংলার সোনারগাঁও অঞ্চলে। মসলিনে তৈরি করা পোশাকসমূহ এতই সুক্ষ্ণ ছিলো যে ৫০ মিটার দীর্ঘ মসলিনের কাপড়কে একটি দিয়াশলাই বাক্সে ভরে রাখা যেতো।

প্রকারভেদ
মসলিনের পার্থক্য করা হতো সূক্ষ্মতা, বুননশৈলী আর নকশার পার্থক্যে।এরই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রকার মসলিনের আলাদা আলাদা নাম হয়ে যায়।
(০১) মলবুস খাস :
'মলবুস খাস' মানেই হলো খাস বস্ত্র বা আসল কাপড়। এজাতীয় মসলিন সবচেয়ে সেরা আর এগুলো তৈরি হতো সম্রাটদের জন্য।আঠারো শতকের শেষদিকে মলবুস খাসের মতো আরেক প্রকারের উঁচু মানের মসলিন তৈরি হতো, যার নাম 'মলমল খাস'। এগুলো লম্বায় ১০ গজ, প্রস্থে ১ গজ, আর ওজন হতো ৬-৭ তোলা। ছোট্ট একটা আংটির মধ্যে দিয়ে এ কাপড় নাড়াচাড়া করা যেতো। এগুলো সাধারণত রপ্তানি করা হতো।

(০২)সরকার-ই-আলা :
এ মসলিনও মলবুস খাসের মতোই উঁচুমানের ছিলো। বাংলার নবাব বা সুবাদারদের জন্য তৈরি হতো এই মসলিন। সরকার-ই-আলা নামের জায়গা থেকে পাওয়া খাজনা দিয়ে এর দাম শোধ করা হতো বলে এর এরকম নামকরণ। লম্বায় হতো ১০ গজ, চওড়ায় ১ গজ আর ওজন হতো প্রায় ১০ তোলা।

(০৩)ঝুনা :
'ঝুনা' শব্দটি, জেমস টেইলরের মতে, এসেছে হিন্দী ঝিনা থেকে, যার অর্থ হলো সূক্ষ্ম ঝুনা মসলিনও সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে তৈরি হতো, তবে সুতার পরিমাণ থাকতো কম। তাই এজাতীয় মসলিন হালকা জালের মতো হতো দেখতে। একেক টুকরা ঝুনা মসলিন লম্বায় ২০ গজ, প্রস্থে ১ গজ হতো। ওজন হতো মাত্র ২০ তোলা। এই মসলিন বিদেশে রপ্তানি করা হতো না, পাঠানো হতো মোঘল রাজ দরবারে। সেখানে দরবারের বা হারেমের মহিলারা গরমকালে এ মসলিনের তৈরি জামা গায়ে দিতেন।

(০৪)আব-ই-রওয়ান :
আব-ই-রওয়ান ফারসি শব্দ, অর্থ প্রবাহিত পানি এই মসলিনের সূক্ষ্মতা বোঝাতে প্রবাহিত পানির মতো টলটলে উপমা থেকে এর নামই হয়ে যায়। লম্বায় হতো ২০ গজ, চওড়ায় ১ গজ, আর ওজন হতো ২০ তোলা।আব-ই-রওয়ান সম্পর্কে প্রচলিত গল্পগুলোর সত্যতা নিরূপন করা না গেলেও উদাহরণ হিসেবে বেশ চমকার। যেমন: একবার সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবারে তাঁর মেয়ে উপস্থিত হলে তিনি মেয়ের প্রতি রাগান্বিত হয়ে বললেন তোমার কি কাপড়ের অভাব নাকি? তখন মেয়ে আশ্চর্য হয়ে জানায় সে আব-ই-রওয়ানের তৈরি সাতটি জামা গায়ে দিয়ে আছে। অন্য আরেকটি গল্পে জানা যায়, নবাব আলীবর্দী খান বাংলার সুবাদার থাকাকালীন তাঁর জন্য তৈরি এক টুকরো আব-ই-রওয়ান ঘাসের উপর শুকোতে দিলে একটি গরু এতোটা পাতলা কাপড় ভেদ করে ঘাস আর কাপড়ের পার্থক্য করতে না পেরে কাপড়টা খেয়ে ফেলে। এর খেসারস্বরূপ আলীবর্দী খান ঐ চাষীকে ঢাকা থেকে বের করে দেন।

(০৫)খাসসা :
ফারসি শব্দ খাসসাএই মসলিন ছিলো মিহি আর সূক্ষ্ম, অবশ্য বুনন ছিলো ঘন। ১৭ শতকে সোনারগাঁ বিখ্যাত ছিলো খাসসার জন্য। ১৮-১৯ শতকে আবার জঙ্গলবাড়ি বিখ্যাত ছিলো এ মসলিনের জন্য। তখন একে 'জঙ্গল খাসসা' বলা হতো। অবশ্য ইংরেজরা একে ডাকতো 'কুষা' বলে।

(০৬)শবনম :
'শবনম' কথাটার অর্থ হলো ভোরের শিশিরভোরে যদি শবনম মসলিন শিশির ভেজা ঘাসে শুকোতে দেয়া হলে শবনম দেখাই যেতোনা, এতোটাই মিহী আর সূক্ষ্ম ছিলো এই মসলিন। ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ প্রস্থের শবনমের ওজন হতো ২০ থেকে ২২ তোলা।

(০৭) নয়ন সুখ :
মসলিনের একমাত্র এই নামটিই বাংলায়। সাধারণত গলাবন্ধ রুমাল হিসেবে এর ব্যবহার হতো। এজাতীয় মসলিনও ২০ গজ লম্বা আর ১ গজ চওড়া হতো।

(০৮)বদন খাস :
এজাতীয় মসলিনের নাম থেকে ধারণা করা হয় সম্ভবত শুধু জামা তৈরিতে এ মসলিন ব্যবহৃত হতো, কারণ 'বদন' মানে শরীরএর বুনন ঘন হতো না। এগুলো ২৪ গজ লম্বা আর দেড় গজ চওড়া হতো, ওজন হতো ৩০ তোলা।

(০৯)সর-বন্ধ :
ফারসি শব্দ সর-বন্ধ মানে হলো মাথা বাঁধা প্রাচীন বাংলা উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা মাথায় পাগড়ি বাঁধতেন,যাতে ব্যবহৃত হতো সার-বন্ধ। লম্বায় ২০-২৪ গজ আর চওড়ায় আধা থেকে এক গজ হতো; ওজন হতো ৩০ তোলা।

(১০)ডোরিয়া :
ডোরা কাটা মসলিন 'ডোরিয়া' বলে পরিচিত ছিলো। লম্বায় ১০-১২ গজ আর চওড়ায় ১ গজ হতো। শিশুদের জামা তৈরি করে দেয়া হতো ডোরিয়া দিয়ে।

(১১)জামদানী :
বর্তমানে বাংলাদেশে জামদানী নামে এক প্রকার পাতলা কাপড়ের শাড়ি পাওয়া যায়। তবে আগেকার যুগে 'জামদানী' বলতে বোঝানো হতো নকশা করা মসলিনকে।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকারের মসলিন ছিলো: 'রঙ্গ', 'আলিবালি', 'তরাদ্দাম', 'তনজেব', 'সরবুটি', 'চারকোনা' ইত্যাদি।

বিলুপ্তি
ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্থানীযভাবে প্রস্তুত করা বস্ত্রের উপরে ৭০ হতে ৮০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়, যেখানে ব্রিটেনে প্রস্তুত করা আমদানীকৃত কাপড়ের উপরে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ কর ছিলো। এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের তাঁতশিল্পে ধ্স নামে।
কথিত আছে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা মসলিন উপাদন বন্ধ করার জন্য মসলিন বয়নকারী তাঁতিদের হাতের বুড়ো আঙুল কেটে নেয।তবে অধুনা অন্য আরেকটু দাবি বেশ যৌক্তিকভাবে সামনে উঠে এসেছে, তা হলো, তাঁতিদের হাত ব্রিটিশরা নয়, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের আঙ্গুল কেটে নিতো, যাতে এই তাতেঁর কাজ আর না করতে হয়।